মা সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার দেবী। সরস্বতীর দেবীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে সরস্বতী পুজো উৎসব আকারে পালিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের “পুরষ্কার” কবিতায় আবেগঘনভাবে সরস্বতীর বন্দনা করেছেন। উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায়। বৌদ্ধ ও পশ্চিম ও মধ্য সরস্বতী পূজা হল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম বড় পূজা ও সরস্বতী পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম প্রচলিত পূজা। সরস্বতী দেবীকে বিদ্যা বা শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী ও আশীর্বাদাত্রী মনে করা হয়। বাংলা মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলায় সফলতার আশায় বা আশীর্বাদ প্রাপ্তের জন্য শিক্ষার্থীরা দেবীর পূজা করে থাকে। তাই মা সরস্বতীকে আশীর্বাদাত্রী মনে করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মের মুখ থেকে সৃষ্টি। দেবীর সকল সৌন্দর্য্য ও দীপ্তির উৎস মূলত ব্রহ্মা। পঞ্চ মস্তকধারী দেবী সরস্বতী। পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর প্রতিমা শ্বেত বস্র পরিধান করেন যা পবিত্রতার নিদর্শন বা পবিত্রতার প্রতীক । দেবীর আসন কে পুষ্পে ভরিয়ে রাখা হয় । পরিবারের সকল সদস্য খুব ভোরে স্নান করে পরিস্কার বস্র পরিধান করে দেবীর সামনে অবস্থান করে থাকেন। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগে দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে। পূজার অর্ঘ্যর পাশাপাশি দেবীর পূজার আরেকটি প্রধান অংশ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক। সরস্বতী পূজার একটি বিশেষ অর্য্য হল পলাশ ফুল। দেবীর অঞ্জলীর জন্য এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান। পুজোর আগের দিন আমরা ফুলের বাজারে গিয়ে সবার আগেই দেখি এই পলাশ ফুল কোথায় কোথায় পাওয়া যায়। কোথায় আছে পলাশ ফুল ছাড়া নাকি মা সরস্বতী দেবীর পুজো সম্পূর্ণ হয় না।
তিথি
বর্তমানে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে দেবীর পুজো করা হয়। তিথিটি বসন্ত পঞ্চমী বা শ্রীপঞ্চমী নামেও পরিচিত। উনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির ওপর তালপাতার দোয়াত-কলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। শহরে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করতেন। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।
মা সরস্বতী দেবীর বিভিন্ন নাম
বাকদেবী, বিরাজ, সারদা, ব্রাহ্মী, শতরূপা, মহাশ্বেতা, পৃথুধর, বকেশ্বরী সহ আরো অনেক নামেই দেবী ভক্তের হৃদয়ে সর্বদা বিরাচ করে। তবে মা এর এই “সরস্বতী” নাম বেশি প্রচলিত।
অর্থে ও উৎপত্তিতে সরস্বতী
সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী। বৃহস্পতি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবতা, বৃহস্পতি পত্নী সরস্বতীও জ্ঞানের দেবী হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে সরস্বতী কেবল জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবীতে পর্যবসিত হলেন। পণ্ডিতরা অনেকেই মনে করেন যে সরস্বতী প্রথমে ছিলেন নদী, পরে দেবী হয়েছেন। এ বিষয়ে সাহিত্যিক রমেশচন্দ্র দত্ত লিখেছেন, “আর্য্যাবর্তে সরস্বতী নামে যে নদী আছে তাই প্রথমে দেবী বলে পূজিত হয়েছিলেন।” প্রতিমাকল্পে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। দেবীর বাহন হাঁস।
পূজার উপকরণ
অন্যান্য সকল পুজোর মতো এই পূজায় বিশেষ কয়েকটি সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে বিশেষ কিছু উপকরণ হল- অভ্র-আবির, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম, যবের শিষ, বাংল বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট-পেন্সিল, গাঁদা ও পলাশ ফুল, ফল-মূল, অন্যান্য ফুল ও বেলপাতা। বসন্তের আমের মুকুল দেওয়া হয় দেবীকে। বসন্তের অন্যতম ফুল পলাশ দেবীর পছন্দের বলে জানা যায়। বিদ্যার দেবীকে ছোটোরা শ্লেট-পেন্সিল, আর বড়রা তাদের বইখাতা অর্পণ করে আশীর্বাদের জন্য।
সমগ্র পূজা পদ্ধতি
পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসন কে পুষ্পশোভামন্ডিত করে রাখা হয়। পরিবারের সকল সদস্য খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার বস্র পরিধান করে দেবীর সামনে অবস্থান করে থাকে। তার কারণ হল মা সরস্বতীর পুজো সকালেই হয়ে থাকে বা আমরা করে থাকি, পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগ পর্যন্ত দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে। পূজার অর্ঘ্যর পাশাপাশি দেবীর পূজার অারেকটি প্রধান অংশ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক। সরস্বতী পূজার একটি বিশেষ অর্য্য হল পলাশ ফুল। দেবীর অঞ্জলীর জন্য এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান। সরস্বতী পুজোর দিন একদম ছোটো শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত। বসন্ত পঞ্চমীর দিন ভোরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী পূজা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সকলে খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার পোশাকে দেবীর পুজো করবে। সেদিন মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না, নিরামিষ খেতে হয়। পুজোর আগে মঙ্গল কামনায় উপবাস রাখা হয়। ওইদিন লেখাপড়ায় নিষেধ থাকে। পূজার আগে বিদ্যার্থীদের কুল খাওয়া বারণ। পূজার শেষে পুষ্পাঞ্জলি। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। পরদিন সকালে আবার পূজা করার পর চিড়ে ও দই মেশানো দধিকর্মা নিবেদন করে নিয়মবিধি সমাপ্ত হয়। পূজাশেষে সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও পূজার দু-তিন পরে দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যথা: অভ্র-আবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিষ। পূজার জন্য বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাঁচার অনুসারে, ছাত্রছাত্রীরা পূজার পূর্বে কুল ভক্ষণ করেন না। পূজার দিন কিছু লেখাও নিষিদ্ধ। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, লেখনী-মস্যাধার (দোয়াত-কলম), পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করার প্রথা প্রচলিত আছে। এই দিন ছোটোদের হাতেখড়ি দিয়ে পাঠ্যজীবন শুরু হয়।পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার প্রথাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের দল বেঁধে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়।পূজার পরদিন পুনরায় পূজার পর চিড়ে ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। এরপর পূজা সমাপ্ত হয়। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
গণেশ প্রণামমন্ত্র
ওঁ দেবেন্দ্রমৌলিমন্দার মকরন্দ-কণারুণাঃ।
বিঘ্নং হরস্তু হেরম্ব চরণাম্বজরেণব্ ঃ দিবাকরম্॥
ওঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননং।
বিঘ্নং নাশ্চকরং দেবং হেরম্বং প্রণাম্যাহম্॥
ওঁ সিদ্ধিদাত্রে গণেশায় সর্ববিঘ্নং প্রশান্তয়ে লেখকায় নমস্তুভ্যং দেবাগ্রযজ্ঞভাগিনে॥
গুরু প্রণাম
ওঁ অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম
তদ্পদংদর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥
ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধ্যস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া
চক্ষুরুনমিলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥
গঙ্গা প্রণাম
ওঁ বিষ্ণুপাদার্ঘ্যসম্ভূতে গঙ্গে ত্রিপথগামিনি।
ধর্মদ্রবীতি বিখ্যাতে পাপং মে হর জাহ্নবি॥
শ্রদ্ধয়া ভক্তি সম্পন্নে শ্রীমাতর্দেবী জাহ্নবি।
অমৃতেনাম্বুনা তব ভাগীরথি পুণীহি মাম্ ॥
সূর্য প্রণাম
ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম।
ধ্বন্তারিং সর্ব পাপঘনং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্॥
তুলসী প্রণামমন্ত্র
‘ওঁ বৃন্দায়ৈ তুলসীদেবৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ।
বিষ্ণুভক্তি প্রদে দেবী সত্যবত্যৈ নমো নমঃ॥
অগ্নি প্রজ্বলন এবং জল শুদ্ধি
ওঁ-কারস্য ব্রহ্ম ঋষির্গায়ত্রীচ্ছন্দেগ্নির্দেবতা সর্বকর্মারম্ভে বিনিয়োগ।
ওঁ সপ্তব্যাপহৃতিনাং প্রজাপতিঋষি গায়ত্রী-উষ্ণিগনুষ্টুপ-বৃহতি পংক্তিত্রিষ্টুপজগত্যশ্ছন্দাংসি অগ্নির্বায়ু সূর্যবরুণ বৃহস্পতিন্দ্র বিশ্বেদেবা দেবতাঃ প্রাণায়ামে বিনিয়োগঃ। গায়ত্র্যাঃ বিশ্বামিত্রঋষির্গায়ত্রিচ্ছন্দঃ সবিতা দেবতা প্রাণায়মে বিনিয়োগঃ॥
গায়ত্রী শিরস প্রজাপতিঋষির্ব্রহ্মবায়ু অগ্নি সূর্যাশ্চতস্রোদেবতাঃ প্রাণায়ামে বিনিয়োগঃ॥
আসন শুদ্ধিমন্ত্র
ওঁ অস্য আসনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠঋষি সুতলং ছন্দঃ।
কূর্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ॥ ১
ওঁ পৃথ্বিত্বয়া ধৃত্বা লোকা দেবিত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।
ত্বং চ ধারায় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরুচাসনম্॥ ২
বামে- গুরুভ্যো নমঃ, ডানে- গণেশায় নমঃ, ঊর্ধ্বে- ব্রহ্মণে নমঃ,
নিচে-অনন্তায় নমঃ, সামনে-শিবায় নমঃ।
দেবতা জাগ্রতকরণ
উত্তিষ্ঠোত্তিষ্ঠ শ্রীগুরো ত্যজ নিদ্রাং কৃপাময়।
উত্তিষ্ঠোত্তিষ্ঠ গৌরাঙ্গ জহি নিদ্রাং মহাপ্রভো।
শুভদৃষ্টিপ্রদানেন ত্রৈলোক্যমঙ্গলং কুরু ॥
ঈশ্বর শ্রীহরে কৃষ্ণ দেবকীনন্দন প্রভো।
নিদ্রাং মুঞ্চ জগন্নাথ প্রভাতসময়ো ভবেৎ ॥
উত্তিষ্ঠোত্তিষ্ঠ গোবিন্দ উত্তিষ্ঠ পরমেশ্বর।
উত্তিষ্ঠ কমলাকান্ত ত্রৈলোক্যংমঙ্গলং কুরু ॥
অগ্নি প্রজ্বলন এবং জল শুদ্ধি করণ
ওঁ-কারস্য ব্রহ্ম ঋষির্গায়ত্রীচ্ছন্দেগ্নির্দেবতা সর্বকর্মারম্ভে বিনিয়োগ।
ওঁ সপ্তব্যাপহৃতিনাং প্রজাপতিঋষি গায়ত্রী-উষ্ণিগনুষ্টুপ-বৃহতি পংক্তিত্রিষ্টুপজগত্যশ্ছন্দাংসি অগ্নির্বায়ু সূর্যবরুণ বৃহস্পতিন্দ্র বিশ্বেদেবা দেবতাঃ প্রাণায়ামে বিনিয়োগঃ। গায়ত্র্যাঃ বিশ্বামিত্রঋষির্গায়ত্রিচ্ছন্দঃ সবিতা দেবতা প্রাণায়মে বিনিয়োগঃ॥
গায়ত্রী শিরস প্রজাপতিঋষির্ব্রহ্মবায়ু অগ্নি সূর্যাশ্চতস্রোদেবতাঃ প্রাণায়ামে বিনিয়োগঃ॥
আসন শুদ্ধিমন্ত্র
ওঁ অস্য আসনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠঋষি সুতলং ছন্দঃ।
কূর্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ॥ ১
ওঁ পৃথ্বিত্বয়া ধৃত্বা লোকা দেবিত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।
ত্বং চ ধারায় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরুচাসনম্॥ ২
বামে- গুরুভ্যো নমঃ, ডানে- গণেশায় নমঃ, ঊর্ধ্বে- ব্রহ্মণে নমঃ,
নিচে-অনন্তায় নমঃ, সামনে-শিবায় নমঃ।
আচমন :
(জল ডান হাতে রেখে)
ওঁ শং নো দেবীরভিষ্টয় আপোভবন্তু পীতয়ে।
শংযোরভিস্রবন্তু ন ॥ ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু । বলে জল দ্বারা ৩ বার মুখ মার্জনা
হাত জোড় করে
ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ।
দিবীব চক্ষুরাততম ॥
ওঁ শঙ্খচক্রধরং বিষ্ণুং দ্বিভূজং পীতবাসসম্।
প্রারম্ভে কর্মণ কর্তা পাবনং তং স্মরেদ্ধরিম ॥
ওঁ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি।
স্মরন্তি সাধবঃ সর্বে সর্বকর্মসু মাধবম্ ॥
ওঁ অপবিত্র পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তÍÍরঃ শুচি॥ (বৃ.ভক্তিতত্ত্বসার)
তিলক ধারণ
কেশবানন্ত গোবিন্দ বরাহ পুরুষোত্তম।
পুণ্য যশস্যমায়ুষ্যং তিলকং মে প্রসাদ তু ॥
চন্দন তিলক
কান্তিং লক্ষ্মী ধৃতিং সৌম্যং সৌভাগ্যমতুলং।
দদাতু চন্দনং নিত্যং সততং ধারয়াম্যহম্ ॥
১. ললাটে কেশবায় নমঃ ২. কণ্ঠে পুরুষোত্তমায় নমঃ
৩. বাম হাতে বাসুদেবায় নমঃ ৪. ডান হাতে দামোদরায় নমঃ
৫. নাভিতে নারায়ণায় নমঃ ৬. হৃদয়ে মাধবায় নমঃ
৭. ডানপাশে গোবিন্দায় নমঃ ৮. বামপাশে ত্রিবিক্রমায় নমঃ
৯. ডান কানের মূলে মধুসূদনায় নমঃ ১০. বামকানের মূলে বিষ্ণবে নমঃ
১১. মাথার মধ্যে হৃষিকেশায় নমঃ ১২. মেরুদণ্ডে পদ্মনাভায় নমঃ
১৩. নাকের ডগায় পবনায় নমঃ ১৪. বাসুদেবায় নমঃ বলে ঘ্রাণগ্রহণ
শিখাবন্ধন
ওঁ ব্রহ্মবাণী সহস্রাণি শিবানী শতেন চ
বিষ্ণোর্নামসহস্রেণ শিখাবন্ধনং করোম্যহম্ ॥
ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎসবির্তুবরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি।
ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ॥
শিখা মোচন
ওঁ গচ্ছন্তু সকলা দেবা ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরাঃ।
তিষ্ঠত্বত্রাচলা লক্ষ্মীঃ শিখামুক্তং করোম্যহম॥
কর শুদ্ধি
‘ঐঁ’ মন্ত্রে ডান হাতে একটি ফুল নিয়ে ওঁ মন্ত্রে উহা দুই হাতে পেষণ করে ঈশান কোণে ফেলতে হবে।
ফুল শুদ্ধিমন্ত্র : ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে
পুষ্পচয়াবকীর্ণে চ হুঁ ফট স্বাহা।
এরপর – এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে ওঁ শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ।
এতে গন্ধেপুষ্পে এতঃ সম্প্রদানৈ ওঁ শ্রীশ্রীদেবতায় নমঃ ॥
ধূপদীপ শুদ্ধি : ওঁ এতৌ ধূপদীপৌ বং নমঃ (বলে ধূপ ও দীপে ফুল দিবেন)
শঙ্খশুদ্ধি : এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ হুং হুং হুং নমঃ মহাশঙ্খায় স্বাহা।
ঘণ্টাশুদ্ধি : এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ জয়ধ্বনি মন্ত্রমাতঃ স্বাহা।
ঘট স্থাপনমন্ত্র : ওঁ সর্বতীর্থদ্ভবং বারি সর্বদেব সমন্বিতম।
ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবগণৈঃ সহ॥
ওঁ স্থাং স্থীং স্থিরোভব।
ওঁ স্থিরোভব বিড়বঙ্গ আশুর্ভব বাজ্যর্বন।
পৃথুর্ভব সুষদস্তমগ্নেঃ পরীষবাহন॥
প্রাণ প্রতিষ্ঠা
প্রতিমার হৃদয়ে আঙ্গুল রেখে
ওঁ মনোজ্যোতিজ্যোষতামাজ্যস্য বৃহস্পতির্যজ্ঞমিমং তনোত্বরিষ্ঠং যজ্ঞং সমিমং দধাতু। বিশ্বে দেবাস ইহ মাদায়ন্তা মোং প্রতিষ্ঠ ॥
ওঁ অস্যৈ প্রাণাঃ প্রতিষ্ঠন্তু অস্যৈ প্রাণাঃ ক্ষরন্তু চ। অস্যৈ দেবত্ব সিদ্ধয়ে স্বাহা॥
অর্ঘ্যজলের ছিটা দিয়ে কম পক্ষে দশবার গায়ত্রী মন্ত্র জপ:
ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎসবির্তুবরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াঃ॥
সামান্যার্ঘ্য স্থাপন
পূজা করতে বসে সামনে (মাটিতে) ত্রিভুজ এঁকে তাকে ফুল-চন্দন দিয়ে পূজা করবে।
এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ অনন্তায় আধারশক্তয়ে নমঃ।
এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ প্রকৃত্যৈ নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ কূর্মায় নমঃ।
এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ অনন্তায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ পৃথিব্যৈ নমঃ।
কোষা প্রক্ষালন করে তার অগ্রভাগ (সরু দিক) দেবতার দিকে ত্রিকোণের উপর স্থাপন করে উহা জলপূর্ণ করে এবং অগ্রভাগে গন্ধপুষ্প, আতপতণ্ডুল, বিল্বপত্র ও দূর্বা প্রদান করতে হবে। এরপর কোষে জল স্পর্শ করে
ওঁ শন্নো আপো ধণ¡ন্যাঃ শমনঃ সন্তুনূপ্যা।
শণঘ্যং সমুদ্রিয়া আপঃ শমনঃ সন্তুকূপ্যাঃ ॥
ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।
নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু ॥
ওঁ কুরুক্ষেত্র গয়াগঙ্গা প্রভাস পুষ্করাণি চ।
তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি পূজাকালে/স্নানকালে ভবন্তীহ॥
সূর্যার্ঘ্য দান
(পূজামন্ত্র : ওঁ হ্রীং হ্রীং সূর্যায় নমঃ)
ওঁ নমঃ সবিত্রে জগদেকচক্ষুষে জগৎপ্রসূতিস্থিতিনাশহেতবে।
এয়ীময়ায় ত্রিগুণাত্মধারিণে বিরিঞ্চিনারায়ণ শঙ্করাত্মনে॥
ওঁ এহি সূর্য সহস্রাংশো তেজোরাশে জগৎপতে।
অনুকম্পায় মাং ভক্তং গৃহাণার্ঘং দিবাকর ॥
সংকল্প
ওঁ তৎ সৎ, অদ্য…….. ,মাসে…… .পক্ষে…..তিথ্যো ……. গোত্র মম সংকল্পিতং…….পূজনকর্মাহং ……..উপাচারে/যথাসাধ্য সংকল্প মস্তু /করিষ্যামি।
দেবতাদিগকে গন্ধপুষ্পদান
এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ সিদ্ধেদাত্রে শ্রীগণেশায় নমঃ।
এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ শ্রীলক্ষ্মীকান্তায় নারায়ণায় নমঃ।
এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ শিবাদি পঞ্চ দেবতাভ্যো নমঃ।
এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রহেভ্যো নমঃ।
এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশদিকপালেভ্যো নমঃ।
এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ মৎসাদি দশাবতারেভ্যো নমঃ।
জল দান মন্ত্র
ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ। ওঁ ব্রাহ্মণেভ্যো নমঃ আচার্যেভ্যো নমঃ।
ঋষিভ্যো, দেবেভ্যো, বেদেভ্যো নমঃ।
বায়বে, মৃত্যবে, বিষ্ণবে নমঃ। বিশ্রবণায়, উপজায় নমঃ।
পিতৃ-মাতৃ প্রণাম
ওঁ পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ পিতাহি পরমং তপঃ।
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতাঃ॥
যৎ প্রসাদাৎ জগৎদৃষ্টং পূর্ণকামো যদাশীষা।
প্রত্যক্ষ দেবতা মে তুভ্যং মাত্রে নমো নমঃ ॥
শ্রীকৃষ্ণ/বিষ্ণু/নারায়ণ প্রণামমন্ত্র
ওঁ ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রাহ্মণ হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥
ওঁ কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরমাত্মনে।
প্রণতঃ ক্লেশ নাশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥
হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে।
গোপেশ গোপীকাকান্ত রাধাকান্ত নমোহস্তুতে ॥
নারায়ণ প্রণামমন্ত্র
ওঁ ত্রৈলোক্যপূজিত শ্রীমন্ সদা বিজয়বর্ধন।
শান্তি কুরু গদাপাণে নারায়ণ নমোহস্তুতে ॥(জ্ঞানমঞ্জরী ২/১৮৭)
লক্ষ্মী ধ্যানমন্ত্র
ওঁ পাশাক্ষ মালিকাম্ভোজ শৃণিভির্যামসৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্য মাতরম্ ॥
গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ নানালঙ্কার ভুষিতাম।
রৌ´পদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তুং॥
লক্ষ্মী প্রণামমন্ত্র
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মলয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে ॥
লক্ষ্মী গায়ত্রীমন্ত্র
মহালক্ষ্ম্যৈ বিদ্মহে মহাশ্রিয়ৈ ধীমহি তন্নঃ শ্রীঃ প্রচোদয়াৎ।
সরস্বতী ধ্যানমন্ত্র
ওঁ তরুণ-শকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
কুচভরণমিতাঙ্গী সন্নিষণা সিতাজে।
নিজকর কমলোদ্যল্লেখনী পুস্তকশ্রীঃ
সকল বিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগ্দেবতা নমঃ॥
মন্ত্র : ওঁ সরস্বতৈ নমঃ।
পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র (৩ বার পাঠসহ)
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।
প্রনাম মন্ত্র( হাত জোর করে )
নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
সরস্বতীর স্তব
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারবভূষিতা
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।
শেষ কথা
মূলত ভারত বর্ষের প্রধান প্রধান পুজোর মধ্যে সরস্বতী দেবীর পুজো। তবে এখন ভার ছাড়াও আরও অনেক দেশেও এই পুজো হয়ে থাকে। সকালে স্নান-আহ্নিক সেরে ইষ্টমন্ত্র জপ বা স্তব পাঠ করতে করতে পূজাস্থলে গিয়ে শুদ্ধাসনে পূর্বমুখে বা উত্তরমুখে বসবেন। ভারতে জৈনরাও সরস্বতীর পূজা করেন। জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, বালি(ইন্দোনেশিয়া) ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে। ওপরের উল্লেখিত নিয়মাবলী ও পূজা পদ্ধতিগুলো ঠিক থাকে মতন করে পুজো করতে হবে আর কোনো রকম সংশয় থাকলে অবশই পন্ডিত জি বা ঠাকুরমশাই এর সাথে যোগাযোগ বা জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন। ধন্যবাদ। মা সবার বিদ্যা,বুদ্ধি, দিক। পোস্টটি শেয়ার করুন সবার উদ্দেশে। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। By : chalokolkata.com
0 coment rios: